জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ প্রণয়নে গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশের সংবিধানে বিধৃত সংশ্লিষ্ট নির্দেশনাসমূহ সংযোজনী-১)
বিবেচনায় রাখা হয়েছে। জাতিসংঘ শিশু অধিকার কনভেনশন, যেখানে প্রত্যেক
সদস্য দেশে সকল শিশুর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার তাগিদ রয়েছে,
সেটিও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। শিক্ষানীতির মূল উদ্দেশ্য মানবতার বিকাশ
এবং জনমুখী উনড়বয়ন ও প্রগতিতে নেতৃত্বদানের উপযোগী মননশীল, যুক্তিবাদী,
নীতিবান, নিজের এবং অন্যান্য ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল,
কুসংস্কারমুক্ত, পরমতসহিষ্ণু, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং
কর্মকুশল নাগরিক গড়ে তোলা। পাশাপাশি শিক্ষার মাধ্যমেই জাতিকে দ্রুত
পরিবর্তনশীল বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার বৈশিষ্ট্য ও দক্ষতা অর্জন
করতে হবে। এই শিক্ষানীতি সংবিধানের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশে গণমুখী,
সুলভ, সুষম, সর্বজনীন, সুপরিকল্পিত,বিজ্ঞান মনস্ক এবং মানসম্পনড়ব
শিক্ষাদানে সক্ষম শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তোলার ভিত্তি ও রণকৌশল হিসেবে
কাজ করবে। এই আলোকে শিক্ষার নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও নীতিগত
তাগিদ নিমড়বরূপ:
১. |
শিক্ষার সর্বস্তরে সাংবিধানিক নিশ্চয়তার
প্রতিফলন ঘটানো এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখ-তা
রক্ষার প্রতি শিক্ষার্থীদের সচেতন করা। |
|
|
২. |
ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে নৈতিক, মানবিক,
সাংস্কৃতিক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠাকল্পে
শিক্ষার্থীদের মননে, কর্মে ও ব্যবহারিক জীবনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করা। |
|
|
৩. |
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শিক্ষার্থীদের
অনুপ্রাণিত করে তোলা ও তাদের চিন্তা-চেতনায় দেশাত্মবোধ,
জাতীয়তাবোধ এবং তাদের চরিত্রে সুনাগরিকের গুণাবলীর (যেমন:
ন্যায়বোধ, অসাম্প্রদায়িক-চেতনাবোধ, কর্তব্যবোধ, মানবাধিকার
সচেতনতা, মুক্তবুদ্ধির চর্চা, শৃঙ্খলা, সৎজীবনযাপনের মানসিকতা,
সৌহার্দ্য, অধ্যবসায় ইত্যাদি) বিকাশ ঘটানো। |
|
|
৪. |
জাতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারা
বিকশিত করে প্রজন্ম পরম্পরায় সঞ্চালনের ব্যবস্থা করা। |
|
|
৫. |
দেশজ আবহ ও উপাদান সমপৃক্ততার
মাধ্যমে শিক্ষাকে শিক্ষার্থীর চিন্তা-চেতনা ও সৃজনশীলতার উজ্জীবন
এবং তার জীবন-ঘনিষ্ঠ জ্ঞান বিকাশে সহায়তা করা। |
|
|
৬. |
দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক অগ্রগতি সাধনের
জন্য শিক্ষাকে সৃজনধর্মী, প্রয়োগমুখী ও উৎপাদন সহায়ক করে তোলা;
শিক্ষার্থীদেরকে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিসম্পনড়ব ব্যক্তিত্ব হিসেবে
গড়ে তোলা এবং তাদের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলীর বিকাশে সহায়তা
প্রদান করা। |
|
|
৭. |
জাতি, ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে আর্থসামাজিক
শ্রেণী-বৈষম্য ও নারীপুরুষ বৈষম্য দূর করা, অসাম্প্রদায়িকতা,
বিশ্ব-ভ্রাতৃত্ব, সৌহার্দ্য ও মানুষে মানুষে সহমর্মিতাবোধ গড়ে
তোলা এবং মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল করে তোলা। |
|
|
৮. |
বৈষম্যহীন সমাজ সৃষ্টি করার লক্ষ্যে মেধা ও
প্রবণতা অনুযায়ী স্থানিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান নির্বিশেষে
সকলের জন্য শিক্ষা লাভের সমান সুযোগ-সুবিধা অবারিত করা। শিক্ষাকে
মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে পণ্য হিসেবে ব্যবহার না করা। |
|
|
৯. |
গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ বিকাশের জন্য পারস্পরিক
মতাদর্শের প্রতি সহনশীল হওয়া এবং জীবনমুখী বস্তুনিষ্ঠ ও ইতিবাচক
দৃষ্টিভঙ্গি বিকাশে সহায়তা করা। |
|
|
১০. |
মুখস্থ বিদ্যার পরিবর্তে বিকশিত চিন্তাশক্তি,
কল্পনাশক্তি এবং অনুসন্ধিৎসু মননের অধিকারী হয়ে শিক্ষার্থীরা যাতে
প্রতিস্তরে মানসম্পনড়ব প্রান্তিক যোগ্যতা অর্জন করতে পারে তা
নিশ্চিত করা। |
|
|
১১. |
বিশ্বপরিম-লে বিভিনড়ব ক্ষেত্রে সফল অংশগ্রহণ
নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শিক্ষার বিভিনড়ব পর্যায়ে ও বিষয়ে উচ্চমানের
দক্ষতা সৃষ্টি করা। |
|
|
১২. |
জ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রযুক্তি নির্ভর (ডিজিটাল)
বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্যপ্রযুক্তি (ওঈঞ) এবং সংশ্লিষ্
অন্যান্য (গণিত, বিজ্ঞান ও ইংরেজি) শিক্ষাকে যথাযথ গুরুত্ব
প্রদান করা। |
|
|
১৩. |
শিক্ষাকে ব্যাপকভিত্তিক করার লক্ষ্যে
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার উপর জোর দেওয়া, শ্রমের প্রতি
শিক্ষার্থীদেরকে শ্রদ্ধাশীল ও আগ্রহী করে তোলা এবং শিক্ষার স্তর
নির্বিশেষে আত্মকর্মসংস্থানে নিয়োজিত হওয়ার জন্য বৃত্তিমূলক
শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনে সমর্থ করা। |
|
|
১৪. |
সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে সম-মৌলিক চিন্তাচেতনা
গড়ে তোলা এবং জাতির জন্য সম-নাগরিক ভিত্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে সব
ধারার শিক্ষার প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে এক ও
অভিনড়ব শিক্ষাμম, পাঠ্যসূিচ ও পাঠ্যবই বাধ্যতামূলকভাবে অনুসরণ।
একই উদ্দেশ্যে মাধ্যমিক স্তরেও একইভাবে কয়েকটি মৌলিক বিষয়ে
পাঠদান। |
|
|
১৫. |
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ে শিশুর/শিক্ষার্থীর
সুরক্ষা ও যথাযথ বিকাশের অনুকূল আনন্দময় ও সৃজনশীল পরিবেশ গড়ে
তোলা এবং সেটি অব্যাহত রাখা। |
|
|
১৬. |
প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে শিক্ষার্থীদের নিজ
নিজ ধর্ম ও নৈতিকশিক্ষার মাধ্যমে উনড়বত চরিত্র গঠনে সহায়তা করা । |
|
|
১৭. |
শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে যথাযথ মান নিশ্চিত করা
এবং পূর্ববর্তী স্তরে অর্জিত (শিক্ষার বিভিনড়ব লক্ষ্য ও
উদ্দেশ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ) জ্ঞান ও দক্ষতার ভিত দৃঢ় করে
পরবর্তী স্তরের সাথে সমন¦য় করা। এগুলো সম্পস্র ারণে সহায়তা করা
এবং নবতর জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনে শিক্ষার্থীদের সমর্থ করা। এই
লক্ষ্যে শিক্ষা প্রμিয়ায়, বিশেষ করে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও
বৃত্তিমূলক শিক্ষার ক্ষেত্রে যথাযথ অবদান রাখার জন্য জনগণকে
উৎসাহিত করা। |
|
|
১৮. |
শিক্ষার্থীদের মধ্যে জলবায়ু পরিবর্তনসহ
প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশ-সচেতনতা এবং
এতদসংμান্ত বিষয়ে দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করা। |
|
|
১৯. |
সর্বক্ষেত্রে মান-সম্পনড়ব উচ্চশিক্ষা নিশ্চিত
করা এবং শিক্ষার্থীদের গবেষণায় উৎসাহী করা এবং মৌলিক
জ্ঞান-বিজ্ঞানের গবেষণার সাথে সাথে দেশের জন্যে প্রয়োজনীয়
গবেষণার উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে তোলা। |
|
|
২০. |
উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষা চর্চা এবং
শিক্ষা-সংশ্লিষ্ট সকল কার্যμম যাতে সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হতে পারে
সেলক্ষ্যে যথাযথ আবহ ও পারিপার্শ্বিকতা নিশ্চিত করা। |
|
|
২১. |
শিক্ষার প্রত্যেক স্তরে শিক্ষাদানের উপকরণ
হিসেবে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করা। |
|
|
২২. |
পথশিশুসহ আর্থ-সামাজিকভাবে বঞ্চিত সকল
ছেলে-মেয়েকে শিক্ষার আওতায় নিয়ে আসা। |
|
|
২৩. |
দেশের আদিবাসী সহ সকল ক্ষুদ্রজাতিসত্তার
সংস্কৃতি ও ভাষার বিকাশ ঘটানো। |
|
|
২৪. |
সব ধরনের প্রতিবন্ধীর শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করা। |
|
|
২৫. |
দেশের জনগোষ্ঠীকে নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত
করা। |
|
|
২৬. |
শিক্ষাক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে পিছিয়ে পড়া
এলাকা গুলোতে শিক্ষা উনড়বয়নে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা। |
|
|
২৭. |
বাংলাভাষা শুদ্ধ ও ভালভাবে শিক্ষা দেওয়া নিশ্চিত
করা। |
|
|
২৮. |
শিক্ষার্থীদের শারীরিক মানসিক বিকাশের পরিবেশ
গড়ে তোলার লক্ষ্যে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ,
μীড়া, খেলাধুলা ও শরীর চর্চার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা। |
|
|
২৯. |
শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে
বিভিনড়ব ব্যবস্থা গ্রহণ করা। |
|
|
৩০. |
মাদক জাতীয় নেশা দ্রব্যের বিপদ সম্পর্কে
শিক্ষার্থীদের সতর্ক ও সচেতন করা। |